বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নৈতিকতার যে করুণ দুরবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা সত্যিই আমাদের চেতনাকে নাড়া দিয়ে যায়। একবিংশ শতাব্দীর এই তথাকথিত প্রগতিশীল যুগে দাঁড়িয়ে আমরা যখন ভাবি, সভ্যতা আমাদের এক উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে, তখনই কিছু নিষ্ঠুর বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, নৈতিকতার মূলে এক ভয়াবহ পচন ধরেছে।
সম্প্রতি ঢাকার প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের এই ধারণাকেই সুদৃঢ় করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে তুচ্ছ একটি কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে একজন শিক্ষার্থীকে। (সূত্র: যমুনা টিভি) এমন একটি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে জ্ঞানের আলোয় শিক্ষার্থীদের আলোকিত হওয়ার কথা, সেখানে এ ধরনের হিংস্রতা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ারই ইঙ্গিত দেয়।
এমনই আরেক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গী। সেখানে এক মা নিজের দু’টি নিষ্পাপ সন্তানকে হত্যা করেছেন নিজের হাতে। (সূত্র: যমুনা টিভি)—একটি মা, যিনি সন্তানের প্রথম আশ্রয়, স্নেহ ও সুরক্ষার প্রতীক, তিনিই যখন পরিণত হন মৃত্যুর দূত হিসেবে, তখন আমাদের আর কিচ্ছু বলার থাকে না। এই ঘটনা কেবল একক কোনো মানসিক বিপর্যয়ের ফল নয়; বরং তা সমগ্র সমাজের নৈতিক অধঃপতনের একটি প্রতীক।
এই রকম তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রাণহানি, পারিবারিক নিপীড়ন ও অমানবিকতার যে ধারা শুরু হয়েছে, তা ক্রমাগত মানবতাকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষ যখন অপরাধবোধ হারিয়ে ফেলে, যখন তার আত্মিক উপলব্ধি ম্লান হয়ে আসে, তখন তার দ্বারা নিকৃষ্টতম কর্মটিও সম্ভব হয়ে ওঠে।
এই সর্বনাশা অবক্ষয় থেকে পরিত্রাণের পথ একটাই—ইসলামের শিক্ষা এবং তার নৈতিক আদর্শে ফিরে যাওয়া। ইসলাম মানুষের হৃদয়ে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা, সংযম, ধৈর্য ও ন্যায়বিচারের বীজ বপন করে। একজন প্রকৃত মুসলমান, যদি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অন্তরে ধারণ করে, তাহলে সে কখনোই হিংসা, হত্যার পথ বেছে নিতে পারে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: "যে ব্যক্তি একটি নির্দোষ প্রাণকে হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো।" (সূরা আল-মায়েদা)
তাই এই অস্থির, অনৈতিক ও অনিরাপদ সমাজব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের ফিরে যেতে হবে নৈতিকতার মূল উৎসের কাছে—ইসলামের শিক্ষার আলোয় গড়ে তুলতে হবে আগামী প্রজন্মকে। পরিবারের প্রতিটি কোষে, শিক্ষাঙ্গনের প্রতিটি স্তরে, এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি নীতিতে ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করাই একমাত্র উপায়। তা না হলে মানবতা নিঃশেষ হবে, সমাজ হবে অশান্তির আগুনে পুড়ে ছারখার।