Notification texts go here Contact Us Download Now!
المشاركات

আল-আস্মাঈ صَوتُ صَفِيرِ البُلبُلِ বুদ্ধিমত্তা ও কাব্যশক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত- আমির হামজা

আরবি সাহিত্যে “সওত সাফির আল-বুলবুলি” (বুলবুলির সুরের আওয়াজ) একটি জনপ্রিয় ও বিস্ময়কর কবিতা, যার পেছনে রয়েছে এক অসাধারণ গল্প—বুদ্ধিমত্তা, কৌশল এবং কাব্যিক প্রতিভার নিপুণ মিশ্রণ। এই কবিতা এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত কাহিনী আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল-মনসুর এবং বিখ্যাত ভাষাবিদ ও কবি আল-আস্মাঈ-কে কেন্দ্র করে আবর্তিত।

আবু জাফর আল-মনসুর ছিলেন এক অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী খলিফা। তিনি কোনো কবিতা একবার শুনলেই তা মুখস্থ করে ফেলতে পারতেন। এই ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি কেউ এমন একটি কবিতা রচনা করে যা তিনি আগে শুনেননি, তবে তিনি তার ওজনের সমপরিমাণ সোনা পুরস্কার দেবেন। তবে কোনো কবি যখন তাঁর সামনে কবিতা আবৃত্তি করত, তখন খলিফা সঙ্গে সঙ্গে তা বলে দিতেন এবং দাবি করতেন যে তিনি এটি পূর্বে শুনেছেন।

এখানেই শেষ নয়, তাঁর এক দাস ছিল, যে কবিতা দু’বার শুনেই মুখস্থ করতে পারত। খলিফা প্রথমবার শুনতেন, তারপর দাসের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার শোনা হতো। আর ছিলেন এক দাসী, যিনি তিনবার শুনলে মুখস্থ করতে পারতেন। এভাবে কবিদের কবিতা আবৃত্তির পর খলিফা, দাস ও দাসী কবিতাটি বলে দিতেন এবং দাবি করতেন এটি পুরোনো। ফলে কবিদের ন্যায্য পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হতে হতো।

আল-আস্মাঈর বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিক্রিয়া

এই অবস্থার মুখোমুখি হয়ে, বিখ্যাত ভাষাবিদ ও কবি আল-আস্মাঈ বুঝতে পারেন যে খলিফা চতুরতার মাধ্যমে কবিদের ঠকাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এতে তো একধরনের কৌশল ও প্রতারণা লুকিয়ে আছে।” এর প্রতিকারে তিনি এক অভিনব পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

তিনি একটি জটিল ও দুর্বোধ্য কবিতা রচনা করেন, যার শব্দচয়ন ছিল বিচিত্র, অর্থ ছিল দুরূহ এবং কাঠামো ছিল অপ্রচলিত। এই কবিতার নাম ছিল "সওত সাফির আল-বুলবুলি"। এরপর তিনি এক বেদুইনের ছদ্মবেশ ধারণ করেন, কারণ খলিফা তাঁকে চিনতেন। মরুভূমির পোশাকে সজ্জিত হয়ে তিনি খলিফার দরবারে প্রবেশ করেন এবং বলেন, “আমার একটি কবিতা আছে যা আপনি কখনো শুনেননি।”

খলিফা আগ্রহ সহকারে কবিতা শোনার অনুমতি দেন। আল-আস্মাঈ তাঁর বিখ্যাত কবিতা আবৃত্তি করেন:

"সওত সাফির আল-বুলবুলি

হাইয়্যাজা কালবি আস্-সামলি"

شعر ... "الأصمعي" ..


صَوتُ صَفِيرِ البُلبُلِ

هَيَّجَ قَلبِي التَمِلِ

الماءُ وَالزَهرُ مَعاً

مَع زَهرِ لَحظِ المُقَلِ

وَأَنتَ يا سَيِّدَ لِي

وَسَيِّدِي وَمَولى لِي

فَكَم فَكَم تَيَمَّنِي

غُزَيِّلٌ عَقَيقَلي

قَطَّفتَهُ مِن وَجنَةٍ

مِن لَثمِ وَردِ الخَجَلِ

فَقالَ لا لا لا لا لا

وَقَد غَدا مُهَرولِ

وَالخُوذُ مالَت طَرَباً

مِن فِعلِ هَذا الرَجُلِ

فَوَلوَلَت وَوَلوَلَت

وَلي وَلي يا وَيلَ لِي

فَقُلتُ لا تُوَلوِلي

وَبَيّني اللُؤلُؤَ لَي

قالَت لَهُ حينَ كَذا

اِنهَض وَجد بِالنقَلِ

وَفِتيةٍ سَقَونَنِي

قَهوَةً كَالعَسَلَ لِي

شَمَمتُها بِأَنَفي

أَزكى مِنَ القَرَنفُلِ

فِي وَسطِ بُستانٍ حُلِي

بِالزَهرِ وَالسُرورُ لِي

وَالعُودُ دَندَن دَنا لِي

وَالطَبلُ طَبطَب طَبَ لِي

طَب طَبِطَب طَب طَبَطَب

طَب طَبَطَب طَبطَبَ لِي

وَالسَقفُ سَق سَق سَق لِي

وَالرَقصُ قَد طابَ لِي

شَوى شَوى وَشاهشُ

عَلى حِمارِ أَهزَلِ

يَمشِي عَلى ثَلاثَةٍ

كَمَشيَةِ العَرَنجلِد

وَالناسِ تَرجم جَمَلِي

فِي السُواق بِالقُلقُلَلِ

وَالكُلُّ كَعكَع كَعِكَع

خَلفي وَمِن حُوَيلَلي

لَكِن مَشَيتُ هارِباً

مِنْ خَشْيَةِ العَقَنْقِلِي

إِلَى لِقَاءِ مَلِكٍ

مُعَظَّمٍ مُبَجَّلِ

يَأْمُرُلِي بِخَلْعَةٍ

حَمراء كَالدَم دَمَلي

أَجُرُّ فيها ماشِياً

مُبَغدِداً لِلذِيِّلِ

أَنا الأَدِيبُ الأَلمَعِي

مِن حَيِّ أَرضِ المُوصِلِ

نَظِمتُ قِطعاً زُخرِفَت

يَعجزُ عَنها الأَدبُ لِي

أَقولُ فَي مَطلَعِها

صَوتُ صَفيرِ البُلبُلِ ..

شاعرها .. الأصمعي ..

কবিতাটি এতটাই জটিল এবং ভিন্নধর্মী ছিল যে খলিফা কিছুই মনে রাখতে পারলেন না। এরপর দাসকে ডাকা হলো, সেও মুখস্থ করতে পারল না। দাসীকেও ডাকা হলো, সেও ব্যর্থ হলো। এতে খলিফা বুঝলেন তিনি প্রতারণা করতে পারেননি।

খলিফা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বললেন, “আমি তোমাকে কবিতাটি যে বস্তুতে লিখেছ, তার ওজনের সোনার পুরস্কার দেব। বলো, তুমি কীসের উপর লিখেছো?” আল-আস্মাঈ কৌশলে উত্তর দিলেন, “আমি আমার পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি পাথরের স্তম্ভে কবিতাটি খোদাই করেছি, সেটি এখন উটের উপর রয়েছে এবং তা দশজন সৈন্য বহন করছে।”

খলিফা আদেশ দেন, সেই পাথর আনো ও ওজন করো। সেই বিশাল পাথরের স্তম্ভ ওজন করে তার সমপরিমাণ সোনা আল-আস্মাঈকে দিতে হয়।

এই ঘটনার সময় একজন মন্ত্রী সন্দেহ করে বলেন, “আমার ধারণা, এই বেদুইন আসলে আল-আস্মাঈ।” খলিফা বলেন, “তোমার মুখোশ খুলো।” মুখোশ খুলতেই দেখা যায়, এই ব্যক্তি আর কেউ নন, বরং স্বয়ং আল-আস্মাঈ।

খলিফা বিস্ময় ও বিরক্তির সঙ্গে বলেন, “তুমি কি সত্যিই আমার সঙ্গে এমন করেছ, হে আল-আস্মাঈ?” তিনি জবাব দেন, “হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি আপনার এই চাতুর্যের মাধ্যমে কবিদের জীবিকা বন্ধ করে দিয়েছেন।”

খলিফা বলেন, “তাহলে সেই সোনা ফেরত দাও।”

আল-আস্মাঈ বলেন, “একটি শর্তে ফেরত দেব।”

“শর্ত কী?”

“আপনি কবিদের তাঁদের মৌলিক এবং অনূদিত কবিতার জন্য ন্যায্য পুরস্কার দেবেন।”

খলিফা সম্মত হন, “ঠিক আছে, আমি রাজি।”

এই গল্পটি শুধুমাত্র একটি মজার কাহিনী নয়, বরং এটি আরবি সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি আল-আস্মাঈর অসাধারণ কাব্যিক প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতার প্রতিফলন। পাশাপাশি এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে—ন্যায়, সৃজনশীলতা ও সাহসের সমন্বয়ে অন্যায়কে প্রতিহত করা সম্ভব। এই কাহিনী আজও পাঠকের হৃদয়ে সাহিত্যের শক্তির অনন্য উদাহরণ হিসেবে অনুরণিত হয়।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.