Notification texts go here Contact Us Download Now!
المشاركات

আর্তুগ্রুল গাজীকে নিয়ে কিছু কথা


সেলজুক সালতানাতের শেষ লগ্নের একজন তুর্কি বীর যোদ্ধা। তিনি ছিলেন তুর্কিদের অঘুজ বংশোদ্ভূত কায়ী গোত্রের লোক। 

জন্ম- তার সঠিক জন্ম তারিখ জানা না গেলেও ধারণা করা হয় যে, আনুমিক ১১৯১ খিষ্টাব্দে তার জন্ম। 

পিতা- সুলাইমান শাহ। 

মাতা- হায়মে খাতুন, যিনি দেভলেত আনা হিসেবেও সুপ্রসিদ্ধ । 


কায়ী গোত্রটি হিজরী সপ্তম শতাব্দী মোতাবেক ইংরেজী তেরশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কুর্দিস্তান কিংবা খোরাসানে অবস্থিত ছিল। এই গোত্রের প্রধান ছিলেন আর্তুগরুল গাজীর পিতা সুলাইমান শাহ। তাদের মূল পেশা ছিল পশুপালন। 


চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে যখন মোঙ্গল বাহিনী ইরাক ও মধ্য এশিয়ার নগরী গুলোতে প্রচন্ড আক্রমণ চালায় এবং অন্যান্য নগরগুলোতে অগ্রসর হতে থাকে, তখন 

মোঙ্গল বাহিনীর আক্রমণ হতে গোত্রকে রক্ষার জন্য সুলাইমান শাহ তার গোত্রকে নিয়ে আনাতলিয়ায় চলে আসেন এবং আখলাত এ বসতি স্থাপন করেন। 


১২৩০ খ্রিষ্টাব্দে সুলাইমান শাহের মৃত্যুর পর তার মেঝ পুত্র আর্তুগ্রুল গাজী কায়ী গোষ্ঠীর প্রধান নির্বাচিত হন। 

প্রধান নির্বাচিত হয়ে তিনি তার বসতিকে মোঙ্গল বাহিনীর আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য আনাতোলিয়ার আরো উত্তর পশ্চিমে হিজরত করে অগ্রসর হতে থাকেন। সে সময় তার সাথে মাত্র একশটির মত পরিবার ছিল এবং চারশত জনের মত সফরসঙ্গী ছিল। 


আর্তুগ্রুল যখন গোত্র নিয়ে পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন তিনি দেখতে পেলেন যে এক জায়গায় দুটি বাহিনী যুদ্ধরত। তিনি পরিস্থিতি বুঝার জন্য কিছুটা অগ্রসর হয়ে দেখলেন যে, বাইজান্টাইন খ্রি সেনাদের সাথে সেলজুক মুসলিম সেনারা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে এবং মুসলিম সেনারা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে । 


আর্তুগ্রুল কাল বিলম্ব না করে তার সেনাদের নিয়ে সেলজুক সেনাদের পক্ষে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। 

যুদ্ধে বাইজান্টাইন সেনাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। 

সেলজুক সেনাদের সহযোগীতার জন্য সেলজুক সেনাপতি আর্তুগ্রুলকে কৃতজ্ঞতা জানান। 


আর্তুগ্রুলের এই বীরত্বের জন্য সুলতান আলাউদ্দীন তাকে "সোগুত" এর জায়গীর নিযুক্ত করেন। 

এই এলাকাটি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত ছিল। সোগুত এর দায়িত্ব আর্তুগ্রুলকে দিয়ে দেয়ায় সুলতান বাইজান্টাইন সেনাদের আক্রমনের ব্যাপারে চিন্তামুক্ত ছিলেন। কারন আর্তুগ্রুল সোগুত এর দায়িত্ব নেয়ায় সেটি সেলজুক সাম্রাজ্যের ঢাল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। আর্তুগরুল সোগুত এর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন এবং সেই সাথে বাইজান্টাইনদের সাথে লড়াই করে "কারাজাহ" দূর্গ সহ তাদের অনেক দূর্গ ও এলাকা দখল করে সেলজুক সাম্রাজ্যেকে আরো প্রসারিত করেন এবং সুলতানের হাতকে শক্তিশালী করেন। 


কিছু ইতিহাস বইয়ে এটিও উল্লেখ রয়েছে যে, পরবর্তীতে সেলজুক সুলতান নিজের শহরকেও আর্তুগ্রুলের দায়িত্বে দেন এবং তাকে নিজ সেনাবাহিনীর উচ্চপদে নিযুক্ত করেন৷ 


এই মহান তুর্কি বীর একজন একনিষ্ঠ ও ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ মুসলমান ছিলেন। 

তার মহান শায়খ বা পীর ছিলেন এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুফী সাধকদের একজন হযরত ইমাম মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী আন্দালুসী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)। 

তিনি সর্বদাই আর্তুগরুলকে ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য কাজ করতে এবং সংগ্রাম করতে উদ্ভুদ্ধ করেছেন এবং আর্তুগ্রুলের ঈমানী জজবাকে বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন। 


ইমাম মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রহ) এর সাথে আর্তুগ্রুল গাজীর সাক্ষাতের বিষয়ে যদিও ইতিহাসবিদদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে, তবুও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আর্তুগ্রুল গাজী এবং তার পরবর্তী প্রজন্ম তথা উসমানীগণ যে কয়জন আল্লাহর ওলীকে খুব বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন, তাদের শিক্ষা ও দিকনির্দেশনাকে নিজেদের মাঝে লালন করতেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাইখুল আকবার ইমাম মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রহ)। 


আর্তুগ্রুল গাজীর অসাধারণ বীরত্বের জন্য তাকে "গাজী" উপাধীতে ভূষিত করা হয়। তিনি দুই বা তিন সন্তানের জনক ছিলেন। 


অবশেষে এই মহান বীর ১২৮০ মতান্তরে ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে "সোগুত" এ ইন্তেকাল করেন। কোন কোন ইতিহাসবিদের মতে, তিনি ১২৯৯-এ ইন্তেকাল করেন এবং সোগুতেই তাকে দাফন করা হয়। আর তার রেখে যাওয়া ভিত্তির উপরই তার কনিষ্ঠ সন্তান উসমান গাজী এমন এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে উসমানী সালতানাত হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রসিদ্ধি লাভ করে। 


"আল্লাহর অসংখ্য অগনিত রহমত এই মহান বীরের উপর বর্ষিত হোক৷" 





Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.